মধু মিষ্টতার মতই তীব্র এর গুণ। প্রাচীনকাল থেকে, মধু খাদ্য এবং ঔষধ উভয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
মধু ফুলের নেকটার থেকে মৌমাছি দ্বারা সংগৃহীত একটি সুমিষ্ট তরল । এর গন্ধ, রঙ এবং স্বাদ পরিদর্শন করা ফুলের প্রকারের উপর নির্ভর করে।এটি অত্যন্ত উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য।
মায়ার পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জেনে নিন মধুর ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
১। মধুর পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগতভাবে, ১ টেবিল চামচ মধুতে (২১ গ্রাম) ৬৪ ক্যালোরি এবং ১৭ গ্রাম চিনি যার মধ্যে আছে, ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ, ম্যালটোজ এবং সুক্রোজ আছে।
এতে কার্যত কোন ফাইবার, চর্বি বা প্রোটিন থাকে না।
এছাড়াও এটি তে অল্প পরিমাণে আছে – ১% এর নিচে আরডিআই যা – বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের। তবে, মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা এটিকে এত গুণের করে তুলেছে।
২। ভালো মধুতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে
ভালো মানের মধুতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এর মধ্যে রয়েছে জৈব এসিড এবং ফেনোলিক যৌগ যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড।
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে এসব যৌগের সমন্বয়ে মধুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আসে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, দুটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি আপনার রক্তের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভ্যালু বাড়িয়ে দেয়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। এটি চোখের জন্যও ভালো।
৩। মধু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনির চেয়ে কম ক্ষতিকর
মধু এবং ডায়াবেটিস এর সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
একদিকে, এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, এটি “ভাল” HDL কোলেস্টেরল বৃদ্ধির পাশাপাশি “খারাপ” এলডিএল কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং প্রদাহ কমাতে পারে। তথ্যসূত্র- ১,২,৩
অন্যদিকে, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে পার্থক্য শুধু এই যে তা সাদা চিনির তুলনায় কম।
যদিও এটি ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পরিশোধিত চিনির চেয়ে সামান্য ভাল, তবুও এটি সতর্কতার সাথে খাওয়া উচিত।
আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মধুর সাথে চিনি মিশিয়ে বিক্রী করে ফলে মধুর উপকারীতা পাওয়ার তুলনায় এক্ষেত্রে ক্ষতিই বেশি হবে বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে।
৪। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে
রক্তচাপ হৃদরোগের জন্য অন্যতম কারণ এবং মধু এটি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
কারণ এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
ইঁদুর এবং মানুষ উভয়ের উপর গবেষণায় দেখা গেছে মধু খাওয়ায় রক্তচাপ সামান্য কমে গিয়েছে। তথ্যসূত্র- ৪,৫
৫।ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়
উচ্চ এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এই ধরনের কোলেস্টেরল অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস এ প্রভাব ফেলে, আপনার ধমনীতে চর্বি জমিয়ে ফেলে যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
মজার ব্যাপার হল, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি আপনার শরীরের জন্য ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে।
এটি “ভাল” এইচডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধির পাশাপাশি উল্লেখযোগ্যভাবে “খারাপ” এলডিএল এবং মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। তথ্যসূত্র- ৬,৭,৮
উদাহরণস্বরূপ, ৫৫ জন রোগীর মধ্যে একটি গবেষণায় মধুকে টেবিল চিনির পরিবর্তে ব্যবহার করতে দিয়ে দেখা গেছে যে এটি এলডিএল ৫.৮% হ্রাস এবং এইচডিএল কোলেস্টেরল ৩.৩% বৃদ্ধি করেছে। এছাড়াও এর ফলে ১.৩% ওজন হ্রাসে ভুমিকা রেখেছে। তথ্যসূত্র-৯
৬। মধু ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে পারে
মাত্রাতিরিক্ত ব্লাড ট্রাইগ্লিসারাইড হৃদরোগের আরেকটি ঝুঁকির কারণ।
এছাড়াও তারা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্টস এর সাথে সম্পর্কিত যা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস একটি প্রধান কারণ।
ট্রাইগ্লিসারাইড চিনিজাতীয় খাবার এবং উচ্চ পরিশোধিত কার্ব গ্রহণের ফলে বৃদ্ধি পায়।
আশ্চর্যের বিষয় হল, একাধিক গবেষণায় নিয়মিত মধু খাওয়াকে নিম্ন ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমানোর সাথে সম্পর্কিত বলা হয়েছে, বিশেষত যখন এটি চিনির পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে। তথ্যসূত্র- ১০, ১১,১২
উদাহরণস্বরূপ, মধু এবং চিনির তুলনামুলক একটি গবেষণায় মধু গ্রুপ এ ১১-১৯% কম ট্রাইগ্লিসারাইড মাত্রা পাওয়া গেছে।
৭। এটি হ্রদবান্ধব
আবার, মধু ফেনল এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এদের অনেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যাওয়ার সাথে সংযুক্ত।
এছাড়াও তারা রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক এর কারণ। ১৩
উপরন্তু, ইঁদুরের উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মধু অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে হার্টকে রক্ষা করে।
৮।পোড়া ও ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে
প্রাচীন মিশরে ক্ষত এবং পোড়া নিরাময়ের জন্য মধু ব্যবহার করা হয়েছে এবং আজও পৃথিবীব্যপি প্রচলিত।
মধু এবং ক্ষত নিরাময় নিয়ে ২৬ টি গবেষণা পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে আংশিক পুরু পোড়া এবং অস্ত্রোপচারের পর আক্রান্ত ক্ষত নিরাময়ে কার্যকর।
৯। মধু শিশুদের কাশি দমনে সাহায্য করতে পারে
উচ্চ শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণে আক্রান্ত শিশুদের জন্য কাশি একটি সাধারণ সমস্যা।
যাইহোক, কাশির জন্য মূলধারার ওষুধ সবসময় কার্যকর নয় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মধু আর জন্য একটি ভালো অপশন হতে পারে, এবং প্রমাণ রয়েছে যে এটি খুবই কার্যকর । ১৪ , ১৫
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি দুটি সাধারণ কাশির ওষুধের চেয়ে ভালো কাজ করেছে। ১৬
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি কাশির লক্ষণ হ্রাস করেছে এবং কাশির ওষুধের চেয়ে ঘুমের জন্য সহায়ক হয়েছে ।
তা সত্ত্বেও, বটুলিজমের ঝুঁকির কারণে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু দেওয়া উচিত নয়। ১৭
১০।এটা সুস্বাদু, কিন্তু উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত
মধু অত্যন্ত সুস্বাদু এবং চিনির একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
তবে অবশ্যই খাটি মধু খাবেন। কারণ চিনি মিশ্রিত ভেজাল মধু খেলে হীতে বিপরীত হতে পারে।
মনে রাখবেন উপকারী হলেও এটি পরিমিত খেতে হবে কারণ এটি উচ্চ ক্যালরি এবং চিনিযুক্ত।
খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত যে কোন তথ্য জানতে মায়া অ্যাপটি ইন্সটল করে প্রশ্ন করুন।